লিচু চাষের জন্য জমি
নির্বাচঃ-
উর্বর বেলে
দোআঁশ মাটি লিচু চাষের জন্য উত্তম। তবে পাহাড়ি টিলা, উঁচু ও মাঝারি
উঁচু জমিতে লিচুর চাষ করলে বেশি লাভবান হওয়া যায়।
জাত পরিচিতি ও চারা
তৈরিঃ-
লিচুর জাতের
মধ্যে বেদানা, গুটি, মাদ্রাজি, বোম্বাই, মঙ্গলবাড়ী, মোজাফফরপুরী, চায়না-৩, কদমী সবচেয়ে ভাল। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা
ইনস্টিটিউট বারি লিচু-১, বারি লিচু-২ ও বারি লিচু-৩ এই ৩টি লিচুর জাত
উদ্ভাবিত করেছে ।
বারি লিচু-১-এই
জাতিয় লিচু ডিম্বাকার এবং লাল রঙের হয়। দেশের উত্তারাঞ্চলে এ জাতটি চাষের জন্য
বিশেষ উপযোগী। এ জাতটি আগাম জাত।
বারি লিচু-২- এই জাতিয় লিচুর বীজ অপেক্ষাকৃত
বড়। প্রতি বছর নিয়মিত ফল দেয়। জাতটি বাংলাদেশের সর্বত্রই চাষ করা যায়।
বারি লিচু-৩-মাঝ মৌসুমী জাত, নিয়মিত ফল ধরে। গোলাপের সুঘ্রান বিশিষ্ট অপেক্ষাকৃত বড় আকারের ফল উৎপাদনকারী এ জাতটি বসতবাড়ীর বাগানের জন্য
অত্যন্ত উপযোগী। ফলের শাঁস মাংসল রসালো ও মিষ্টি। লিচুর চারা কাটিং ও গুটি কলমের মাধ্যমে তৈরি করা হয়।
সার ব্যবস্থাপনা ও
চারা রোপণঃ-
চারা রোপণ করার
আগে গর্ত তৈরি করে- প্রতিটি গর্তে টিএসপি সার ৭০০ গ্রাম, এমওপি সার ৪৫০ গ্রাম, জিপসাম সার ৩০০ গ্রাম, জিংক সালফেট ৬০ গ্রাম ও জৈবসার ২৫ কেজি দিতে হয়। গর্ত ভর্তির ১০-১৫ দিন পর
মাটির বলসহ গর্তের মাঝখানে সোজাভাবে চারা লাগাতে হবে।
জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়
মাস কলমের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। ৮-১০ মিটার দূরে দূরে চারা রোপণ করতে হয়।
চারা রোপণের ৩
মাস পর ৩০০-৩৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা দরকার।
এবং পূর্ণ বয়স্ক ফলন্ত গাছের জন্য প্রতি বছর
ইউরিয়া সার ২ কেজি, টিএসপি সার ৩.৫ কেজি, এমওপি সার ২ কেজি, জিপসাম সার ২৬০ গ্রাম, জিংক সালফেট সার ৬০ গ্রাম, গোবর ১৫ কেজি এবং ৯ কেজি ছাই প্রয়োগ করতে হয়।
অন্তবর্তীকালীন
পরিচর্যাঃ-
কলমের গাছের বয়স
৪ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত মুকুল ভেঙ্গে দেয়া দরকার। এবং পূর্ণ বয়স্ক গাছে
পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশের জন্য অপ্রয়োজনীয় ডালপালা কেটে ফেলতে হবে।
চারা গাছের
বৃদ্ধির জন্য ঘন ঘন সেচ দিতে হবে। তাছাড়া গাছের গোড়া আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ-
ফলের খোসার কাঁটা চ্যাপ্টা হয়ে যখন মসৃণ হয় এবং ফলের গায়ে লালচে বর্ণ ধারণ করে তখন
লিচু থোকায় থোকায় কিছু পাতাসহ ডাল ভেঙ্গে সংগ্রহ করতে হবে।
লিচু ফলের কিছু সমস্যা ও সমাধান
ফলে পোকা সমস্যঃ- ফল ছিদ্রকারী পোকা এটি লিচুর একটি ক্ষতিকারক
পোকা। এর আক্রমণে লিচুর বাজার মূল্য কমে যায়। ফল পরিপক্ক
হওয়ার সময় এ পোকা ফলের বোঁটার নিকট দিয়ে ভিতরে ঢুকে বীজ খেতে থাকে। এরা ফলের শাঁস
খায় না তবে বোঁটার কাছে বাদামী রংয়ের এক প্রকার করাতের গুড়ার মত পদার্থ উৎপন্ন
করে।
সমাধানঃ- এ পোকা দমনের জন্য ফল ধরার পর লিবাসিড ৫০
তরল বা ফেনিট্রোথিয়ন ৫০ তরল অথবা টোসিটকস আর ২৫ তরল এর যেকোন একটি প্রতি লিটার
পানিতে ১ মি.লি হারে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে। তবে মনে
রাখতে হবে ফল সংগ্রহের অন্তত: ১৫ দিন পূর্বে স্প্রে দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
পাতার ক্ষুদ্র
মাকড়ঃ-লিচু গাছের পাতা, ফুল ও ফলে এর আক্রমণ দেখা যায়।
সমস্যাঃ- আক্রান্ত পাতা কুঁকড়িয়ে যায় এবং
পাতার নীচের দিক লাল মখমলের মত হয়। পরবর্তীতে পাতা দুর্বল হয়ে মরে যায় এবং ডালে
ফুল, ফল বা নতুন পাতা হয় না। আক্রান্ত ফুলে ফল হয়
না।
সমাধানঃ- আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলা।
ইথিয়ন ৪৬.৫ তরল বা নিউরণ ৫০০ তরল ২ মি.লি হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত
গাছে ভালভাবে স্প্রে করা।
লিচু ফেটে যাওয়া সমস্যাঃ- লিচু ফল সাধারণত বড় হওয়ার পর অর্থাৎ ফল পুষ্ট হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে ফাটা শুরু করে। এবং উক্ত
ফাটা জায়গায় রোগ জীবানুর আক্রমণ ঘটতে পারে। ফলে গোটা ফল নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা দেখা
দেয়। ফল ফেটে গেলে তার বাজার মূল্য কমে যায়। তাছাড়া কোন কোন সময় তা খাওয়ার
অনুপযুক্ত হয়ে যায় ফলে কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে।
লিচুর ফল ফাটা
বিভিন্ন রকম হতে পারে। সামান্য ফাটা, কেবলমাত্র খোসা
ফাটা, লম্বালিম্বভাবে গোটা ফল ফাটা ইত্যাদি। ফল
ফেটে গেলে তার অপক্ক শাঁস অনাবৃত হয়ে পড়ে এবং সরাসরি
বাতাসের সংস্পর্শে আসে ফলে শাঁস
দ্রুত শুকায়ে যায়। পরবর্তীতে তা রোগ ও পোকার আক্রমণের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়।
সমাধানঃ-
* যে সব জাত ফাটল প্রতিরোধক/ সংবেদনশীল সে গুলোর
চাষাবাদ করতে হবে।
* বিভিন্ন প্রকার হরমোন সেপ্র করে ফলের
পরিপক্কতা দীর্ঘায়িত করা এবং খোসার সমপ্রসারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ফলের ফাটা
দমনের ক্ষেত্রে ভাল ফলাফল পাওয়া গেছে। ন্যাপথালিন এসিটিক এসিড ২৫ পিপিএম হারে এর
সাথে জিবারেলিক এসিড ৫০ পিপিএম হারে ১০ দিন পর পর স্প্রে করে ফাটল রোধ করা সম্ভব।
* ফল বৃদ্ধির সময় জিংক সালফেট (প্রতি লিটারে ৫
গ্রাম), বোরাক্স/ বরিক এসিড (প্রতি লিটারে ৫ গ্রাম)
একত্রে বা আলাদা আলাদা ভাবে সেপ্র করলে ফল ঝরে পড়া ও
ফাটা উভয় সমস্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়।
* ফল বৃদ্ধির সময় গাছে নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণ
সেচ প্রদান করলে মাটির আর্দ্রতা/রস বৃদ্ধি এবং বাতাসের তাপমাত্রা কমে যাবে। ফলে
লিচুর ফাটল কমে যাবে।
* মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার প্রয়োগ করতে
হবে। জৈব সার প্রয়োগে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বেড়ে যাবে। ফলে বিরুপ আবহায়ায় মাটির
রস দ্রুত হ্রাস বৃদ্ধির হার কমে যাবে। উপরন্ত, জৈব সারে সব
ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকায় মাটির অপুষ্টি জনিত সমস্যাও দুর হবে।
* অনেক সময় চাষীরা ফল ফাটার প্রকৃত কারন নির্ণয়
করতে পারেনা। সে জন্য একক ভাবে কোন চেষ্টার উপর নির্ভর না করে উপরের আলোচিত
প্রতিকারগুলোর সমন্বিত ব্যবস্থা নিলে কার্যকর ভাবে লিচুর ফাটল রোধ করা সম্ভব হবে।
মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। জৈব